সম্পাদকীয় :
বাংলাদেশের যুবসমাজকে গ্রাস করেছে ইয়াবার মরণনেশা। এই নেশার নীল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে অসংখ্য সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী। জানা গেছে, সড়ক ও নৌপথে অন্তত ২৯টি পয়েন্ট দিয়ে ভয়ানক এ মাদক সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। মূলত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং দেশটির নিয়ন্ত্রণাধীন একটি গ্রুপের অধীনে থাকা কারখানাগুলোয় ইয়াবা তৈরির পর রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রুপ ও দেশের মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে তা মাদকসেবীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় জীবন ধ্বংসকারী এ মাদকের দামও এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে ইয়াবাসেবীর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে।
এটি স্পষ্ট যে, কোনো জিনিস সহজলভ্য হলে তার বিস্তার ঘটে দ্রুত। ইয়াবার ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। ইয়াবার সহজলভ্যতা রোধে আইনরক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। অথচ অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক কেনাবেচা ও পাচারে সহায়তা করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও মাদক পাচারের সঙ্গে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নামে নির্দিষ্ট একটি দপ্তরই আছে দেশে। কিন্তু ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক নিয়ন্ত্রণে এই দপ্তরের কার্যক্রম চোখে পড়ে না। অবশ্য শুধু আইন করে মাদকের ব্যবহার ও বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। শিশু-কিশোরদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা, আদর্শ জীবনবোধ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করা জরুরি। মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো তার পরিবার। মাদকমুক্ত জাঁতি গঠনে পরিবারকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। শিশু-কিশোররা মাদক সেবনের দিকে যাচ্ছে কিনা-এ ব্যাপারে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও তার সঠিক বাস্তবায়ন অপরিহার্য। একই সঙ্গে আইনের প্রয়োগে আরও কঠোর হওয়া উচিত, যাতে অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিন কিংবা মুক্ত হয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারে।
এটি স্পষ্ট যে, ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের একটি তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আছে। কিন্তু মাদক পাচারকারীরা অধিকাংশই সরকারদলীয় লোক হওয়ায় পুলিশ বা প্রশাসন তাদের গ্রেফতারে আন্তরিক নয়। ইয়াবার সর্বনাশা ছোবল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সমাজে অবক্ষয় আরও বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকের বিস্তার রোধে রাষ্ট্র, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের সব স্তরের মানুষের সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ জনগোষ্ঠীর ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠবে, যা মোটেই কাম্য নয়।
//এমটিকে