আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
গত মাসে শ্রীলংকান পপকুইন ইয়োহানির ‘মাগে হিতে’ সংগীতটি ঝড় তুলেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। গানটি নিয়ে দর্শকরা হইচই মাতিয়ে ফেলেন।
এবার বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ‘কাঁচা বাদাম’ সংগীতটি।
অনেকের মনে করেন, উপ-মহাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই গান এখন বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষাভাষি মানুষের মুখে মুখে।
সুদূর সাইবেরিয়া কিংবা মরুর পথে হাঁটতে হাঁটতে কারো মুখে বাংলা ভাষার সংগীতটি শুনলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এই গানের গীতিকার, সুরকার আর গায়ক কে? আর গানটি এলো কোথা থেকে! অনেকেরই অজানা।
সেই অর্থে ‘কাঁচা বাদাম’ কোনো সংগীত নয়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এক ফেরী করা বাদামওয়ালার মুখে মুখে বানানো বাক্য মাত্র।
জানা গেছে, ভাইরাল ‘কাঁচা বাদাম’ সংগীত স্রষ্টার নাম ভুবন বাদ্যকর। তিনি একজন বাদাম বিক্রেতা। তার বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের কুড়ালজুরি গ্রামে। সেখানে একটি মোটরসাইকেলের পেছনে বাদাম নিয়ে গ্রামে, বাজারে, বন্দরে, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাদাম বিক্রি করেন। ভাজা বাদাম বিক্রি করেন না ভুবন। তার কাছে পাওয়া সব বাদামই কাঁচা। আর শুধু টাকা দিলেই বাদাম মিলে না। বাড়ির অব্যবহৃত পুরনো যন্ত্রাংশ, নষ্ট মোবাইলের যন্ত্রাংশ, ব্যাটারি, হাঁসের পালক, মাথার চুল, সিটি গোল্ডের চেইন, দুল, চুড়ির মতো গহনার বিনিময়ে বাদাম দিয়ে থাকেন ভুবন।
আর এসব তথ্য সংগীতের তালে তালে বলে বেড়ান ভুবন, যা আজ ‘কাঁচা বাদাম’ সংগীত হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোরন সৃষ্টি করেছে।
সংগীতের বাক্যগুলো এমন— ‘বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বুবু ভাজা বাদাম…’
সংগীতটির কথা, সুর ভুবন বাদ্যকরেরই। এর গায়কও তিনি। ভুবনের এই গানের কথায় ও সুরে মজেননি এমন মানুষ এখন হাতে গোনা। ফেসবুক, ইউটিউব, রিলস খুললেই বেজে উঠছে এই সংগীত।
রীতিমতো সেলিব্রিটি বনে গেছেন বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকর। তাকে দেখতে ভিড় জমছে তার বাড়িতে। তিনি যখন যে গ্রামে বাদাম বিক্রি করতে যাচ্ছেন, সেখানেই তাকে দেখতে ভিড় করে আসছেন সাধারণ মানুষ। ভারতীয় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন ইতোমধ্যে।
এভাবে ভাইরাল হয়ে ভুবনও বেশ উচ্ছ্বাসিত। নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে বললেন, ‘মোবাইলে আমার গান দেখছে সবাই। দেখা হলেই সবাই এসে আমার গানের প্রশংসা করে যাচ্ছে। ভালোই লাগছে। সংগীতটি আমিই লিখেছি, আমারই তৈরি। আমারই সুর, আমারই গলা। চিন্তাভাবনা করতে করতেই করেছি। বিগত ১০ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করছি। আমি বাদাম বিক্রি করতে গিয়ে এই সংগীত গাই। সেই সময় কোনও একটি ছেলে সেই গান ক্যামেরা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু আমি সেই ছেলেটিকে চিনি না।’
আগে কখনও গান করতেন প্রশ্নে ভুবন বলেন, ‘হ্যাঁ, এর আগে বাউল সংগীত গেয়েছি। এখন আমি ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাদাম ফেরি করি। সেই বাদাম কী করে বিক্রি করা যায়, সেই থেকেই ভাবনাচিন্তা। তারপরই সংগীত লেখা।’
ভাইরাল হওয়ার পর বিক্রি বেড়েছে বলে জানান ভুবন, ‘সংগীত শুনে বহু মানুষই বাদাম কিনতে আসছেন। কেউ ৫ টাকার বাদাম কিনছেন, কেউ ১০ টাকার। বিক্রিবাটা ভালোই চলছে। আগে পায়ে হেঁটে বাদাম ফেরি করতাম। কিছুদিন মোটরসাইকেলেও করেছি। এখন ১৫,০০০ টাকা দিয়ে একটি মোটরসাইকেল কিনেছেন। তাতে করেই বাদাম ফেরি করছি।’
ভুবনের মুখে কাঁচা বাদাম সংগীতটি শুনুন—