শহিদুল ইসলাম :
নওগাঁয় জন্মনিবন্ধন অনলাইন ও সংশোধন করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন লোকজন। বিশেষ করে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের করোনা’র ভ্যাকসিন (টিকার) আওতায় আনার পর ও প্রথম ডোজ গ্রহনের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পূর্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনলাইন (ইংরেজি-বাংলা) জম্ননিবন্ধন সনদ চাওয়ার পর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অনলাইন জম্ননিবন্ধন সনদ সংগ্রহে ভীর জমান। আর এ কারণে বিভিন্ন স্থানের ন্যায় নওগাঁতে অনলাইন জম্ননিবন্ধন সনদ সংগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই ‘সার্ভার সমস্যা’সহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সর্বনিম্ন দ্বিগুন, অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত ৫০ টাকার স্থলে ১শ’ টাকা থেকে শুরু করে ২শ’ টাকা এমনকি ৬শ’ টাকা ও নেওয়া অভিযোগ রয়েছে।
অতিরিক্ত টাকা নেওয়াসহ দিনের পর দিন ঘুরানোর কারনে চরম দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন লোকজন। শুধু করোনা ভ্যাকসিন টিকার ক্ষেত্রে নয় প্রশাসনিক সব কর্মকাণ্ড ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যবহার হওয়ায় জন্মনিবন্ধন অপরিহার্য। পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, জমি রেজিস্ট্রেশন, করোনার ভাইরাস এর টিকা, বিয়ে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ ১৭টি সেবার ক্ষেত্রে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নিবন্ধন অনলাইন করতে আসা লোকজনকে সার্ভার ত্রুটির অজুহাতে সেবা প্রদানকারীরা সরকারি নির্দেশ অমান্যকরে সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে দ্বিগুন, অর্থাৎ ৫০ টাকার স্থলে ১শ’ টাকা, এমনকি ২ শত থেকে ৬ শত টাকা নেওয়ার ও অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সম্পতি প্রতিবেদক নিজে তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে (বাংলা অনলাইন করা আছে সংসোধন ইংরেজি করতে হবে) ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ভাতিজা (বাবা ও মা’র অনলাইন করা আছে-শুধু নিজের শিক্ষার্থীর অনলাইন করতে হবে) কে সাথে নিয়ে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ৯নং চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রবেশ করার পরই পরিষদের একজন গ্রাম পুলিশ সাথে থাকা দু’জন শিক্ষার্থীকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাস করেন, আপনি যদি জন্মনিবন্ধনের জন্য এসে থাকেন তাহলে একটি রুম দেখিয়ে বলেন, জন্মনিবন্ধন বা সংসোধন করতে ঐ রুমে যান, ভালো করে কাজ করে দিবেন। এ সময় প্রতিবেদক নিজেও দেখতে পান পরিষদের একই বিল্ডিংয়ে ইউনিয়ন তথ্যসেবার ঘরে লোকজনের ভীড় কম আর গ্রাম পুলিশের দেখানো ঘরে লোকজনের ভীর তুলনামূলক অনেক বেশী। ঘরে ঢুকেই দেখা গেলো শিশু ও শিক্ষার্থীদের সাথে আসা তাদের অভিভাবক নারী-পুরুষদের জন্মনিবন্ধন অনলাইন করতে টাকা নিয়ে দেন-দরবারের চিত্র। এক পর্যায়ে সেবা প্রদানকারী প্রতিবেদককে দেখতে পেয়ে বসতে এবং ঘরে ভীড় জমানো লোকজনকে বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলেই প্রতিবেদক এর নিজ ছেলেরটা সংসোধন করতে সরকার নির্ধারীত টাকা নিলেও ভাতিজার নিবন্ধন করতে ২৫০ টাকা চাইলেও পরে ২শ টাকা নেয়। এ মহূর্তে কোলে শিশুসহ এক নারী ঘরে প্রবেশ করেই প্রশ্ন করলেন, আমার এক বছর বয়সী এক শিশুর জন্য আপনি ৬ টাকা নিলেন? ১শ’ টাকা কমনিতে বললাম শুনলেন না তাও বলছেন কয়েকদিন পর নারীর এমন কথাশুনে কিছুটা বিরক্তবোধ করেই সেবা প্রদানকারী বললেন, আপনার সন্তানের বয়স কমিয়ে নেন ফি দিতে হবে না, এমন বিরক্তিকর কথাশুনে নারী ঘর থেকে বাহিরে যান।
এ সময় প্রতিবেদক ৬শ’ টাকা কেন? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অনেক ঝামেলার কাজ, সব সময়ই লোকজনের ভীড়, তারমধ্যে সার্ভার সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে গভীর রাতজেঁগে কাজ করতে হচ্ছে, রাত জাগার কারণে শরীর শুকিয়ে ওজনও কমেছে আমার এমন নানাকথা বলতে বলতে জড়ো হওয়া কগজপত্র বেরকরে দেখান এবং বলেন, উপজেলাতে টাকা দিয়ে কাজগুলো রাত জেগে করে নিচ্ছি, না হলে মহাদেবপুর ঘুরতে ঘুরতে মানুষের পায়ের চামড়া ওঠে যেত বলেও দাবি করেন তিনি।
উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন, মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারি সঞ্জয় কুমার প্রামানিক।
এছাড়াও বিশেষ করে উচ্চ বিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ, নিবন্ধন সংশোধনের জন্য অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। এমনকি ইতিপূর্বেও অনলাইন করতে টাকা নিয়েছে, তারপর ইংরেজি কপি দরকার সেই জন্যও টাকা নিচ্ছে তাও আবার সরকারি চাকুরীজিবী ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী সঞ্জয় কুমার প্রামানিক নিজেই সার্ভার সমস্যাসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ৫০ টাকার স্থলে ২শ’ থেকে ৬ শ’ টাকা নিচ্ছে, যেন বলার কেউ নেই-দেখারও কেউ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, এর পূর্বে সন্তানকে স্কুলে ভর্তির সময়ও অনলাইন করতে ২/৩ শত টাকা করে দিতে হয়েছে, সেগুলোই আবারও পুনরায় অতিরিক্ত টাকাদিয়ে নতুন করে ইংরেজি বাংলা কপি বের করেনিতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বিকালে চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অজিত কুমার বর্মন এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে হিসাব সহকারি সঞ্জয় কুমার প্রামানিক জন্মনিবন্ধন বা সংসোধন করার জন্য সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা, এমনকি ১ শত ৬ শত টাকা নিচ্ছে অবগত করে জানতে চাইলে, তিনি প্রথমে ঘটনাটি এড়িয়ে যাওযার চেষ্টা করেন। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে আছে জানালে, তিনি নিজেদের লোক পরিচয়ে সংবাদ প্রকাশ না করে অফিসে যেতে বলেন প্রতিবেদককে।
একই বিষয়ে চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিবনাথ মিশ্র’র কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি কাজে বাইরে নওগাঁতে আছেন জানিয়ে প্রতিবেদককে বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না। এমন কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসে নাই। বা আমি জানি না, তবে বিষয়টি দেখছি বলেও জানান তিনি।
হিসাব সহকারীর বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করাহলে তিনি, প্রথমে বলেন, সার্ভার সমস্যা’র কারণে সময় মতো কাজ করতে পারছি না বলেই রাত জেগে কাজ করি ও উপরেও মিষ্টি খাওয়ার জন্য দিতে হয়, আমি দাওয়াত খেতে বাইরে আছি পরে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন। অতিরিক্ত টাকা নেওয়া বন্ধসহ ঘটনাটি তদন্তপূর্বক জড়ীত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল।
//এমটিকে