অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা রক্তে উচ্চ মাত্রার চিনি , সময়ের সাথে সাথে কিডনির জটিল রোগ এবং কিডনি ফেইলিউরের কারণ হতে পারে। কিডনিতে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলি (কৈশিক) এমনকি তাদের মধ্যে ক্ষুদ্রতর ছিদ্রগুলি ছাঁকনি হিসাবে কাজ করে. রক্তনালীতে যেহেতু রক্ত প্রবাহিত হয়, বর্জ্য পদার্থের ছোট অণুগুলি ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে ছেঁকে যায়.এই বর্জ্য পদার্থগুলি প্রস্রাবের অংশ হয়ে যায়.প্রোটিন এবং লোহিত রক্তকণিকার মতো দরকারী পদার্থগুলি ফিল্টারের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে যেতে পারেনা ,তাই রক্তের সাথে প্রবাহিত হয়ে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এই পুরো সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে. উচ্চ মাত্রার ব্লাড সুগার কিডনিকে খুব বেশি রক্ত ফিল্টার করতে ব্যবহার করে. এই সমস্ত অতিরিক্ত কাজ ফিল্টারগুলির জন্য ক্ষতিকর. একটা সময় পরে ছিদ্র বড় হতে শুরু করে এবং রক্তে দরকারী প্রোটিন বের হয়ে যায়।
সময়ের সাথে সাথে অতিরিক্ত কাজের চাপ কিডনিগুলির ফিল্টারিং ক্ষমতা হারাতে পারে. ফলে বর্জ্য পদার্থগুলি রক্তে জমতে শুরু করে। অবশেষে কিডনি ব্যর্থ হয়. এই চূড়ান্ত ব্যর্থতা কে বলা হয় ইএসআরডি(ESRD) ,যা খুব গুরুতর. ইএসআরডি আক্রান্ত ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপন বা মেশিন (ডায়ালাইসিস) দিয়ে রক্ত ফিল্টার করা দরকার হয়ে পরে। কিডনির জটিলতা শুরু হওয়া প্রথম দিকে খাবারে অরুচি, শারীরিক দুর্বলতা, শরীরের চুলকানি ,ওজন কমে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা হওয়া , কিছুটা শ্বাসকষ্টও হতে পারে,এছাড়াও কিডনি জটিলতার কারনে পায়ে পানি জমতে শুরু করে এবং পা ধীরে ধীরে অচল হয়ে যায়. যার ফলে চলাফেরা একরকম অসম্ভব হয়ে পড়ে. ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি আরও বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয় ,কারণ পায়ে পানি জমা থেকে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়. সামান্য ইনফেকশন অনেক সময় গ্যংগ্রিনে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে. এক্ষেত্রে পা কেটে বাদ দেয়ার ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়.অনেক সময় পা কেটে ফেলার পরেও জটিলতা দেখা দেয়.তাই কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা অবহেলা করা উচিৎ না।
তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সকলেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় এমন না. কিডনি রোগের বিকাশকে যে কারণগুলি প্রভাবিত করতে পারে তার মধ্যে জেনেটিক কারণ, রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ রক্তচাপ অন্তর্ভুক্ত. তাই একজন ব্যক্তি যত ভাল ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা তত কমে যায়। অতএব আসুন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেতন হই. – – রোটারিয়ান ডা. আল- ওয়াজেদুর রহমান, বিশিষ্ট চিকিৎসক, সংগঠক ও লেখক.