আকাশ মারমা মংসিং :
তমা তুঙ্গী এটি ৩টি পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত এই পাহাড়। যে পাহাড় থেকে চোখ মেলালে দেখা যায় কেক্রাডং, ডিমপাহাড় এমনকি সবচেয়ে উচুঁ পাহাড় তাজিংডং। দেখা যায় ছোট ছোট পাহাড় পর্বত কিংবা সূর্য ডুবে যাওয়া দৃশ্যটি। পাহাড়ের উপর উঠলে নানান রকমে প্রাকৃতিক অপরুপ সৌন্দর্য লীলাভূমি যেন হাতের ছোঁয়াই অনুভুতি করা যায়। আবার সন্ধ্যকালীন সূর্য ডুবে যাওয়ার দৃশ্যটি সবার মন কেড়ে নেয়।
পাহাড়টি খানিকটুকু উঁচুতে মাঝখানে সড়কে দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে তমা তুঙ্গী। এর উপর থেকে দাঁড়িয়ে দূরে তাকালে ছোট ছোট পাহাড় পর্বত এমনকি পাহাড়ের মাঝখানে সড়কগুলো আঁকাবাঁকা মেথোপথে বয়ে চলে গেছে অনেক দূরে। দেখা যায় এক অপরুপ গ্রাম্যর দৃশ্য জুমের কিংবা ছোট গ্রামে আগুনের ধোয়াই ফুতফুত করে যেন জ্বলছে বাড়ির কিনারে। সন্ধ্যায় গড়িয়ে এলে সেই ছোট ছোট গ্রামে হৈহুল্লোর আর সোলার কিংবা হারিকেন আলো যেন ফুটে ওঠে ঝলমল করে।
আবার সাথসকালে সূর্য মামা উঠার আগের কিচকিচ করে পাখির শব্দের ছুটে গেলে দুরদুরান্ত পাহাড়গুলোতে মেঘের লুকোচুরি খেলা খেলছে। মেঘালয়ে পর্বতে শুধু শীতের কুয়াশা চাদরে ঢেকে রেখেছে আমারদের এই সবুজ শ্যমলা পাহাড়টিকে। মন জুড়িয়ে যায় যখন এই দৃশ্যগুলো দেখা মিলে।
তবে এই তমা তুঙ্গীকে মারমাদের ভাষায় বলা হয় তং মা তগ্রী। যার অর্থ হল পাহাড় নারী বড় পাহাড়। তিনটি পাহাড়ের মাঝখানে আছে বিধায় এই পাহাড়টি নাম রাখা হয় “পাহাড় নারী বড় পাহাড়”।
বান্দরবান শহর থেকে ৮৪ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলায় অবস্থিত পর্যটনকেন্দ্র “তমা তুঙ্গী”। সড়কপথে সাড়ে তিন ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে গেলে থানচি অতপর তমা তুঙ্গী পর্যটন স্পট। এটি খোলা আকাশের নিচে চারপাশে পাহাড়ের বিস্তৃত এই পর্যটন স্পট।
এইদিকে ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট ১ এবং ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট ২ নামে পাশাপাশি দুটি স্থান রয়েছে তমা তুঙ্গীতে। এরমধ্যে ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট ১ এ গেলে সেখান থেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তজিংডং, ২য় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ক্যাওক্রাডং এবং ডিম পাহাড় অবলোকন করা যায়। দিক নির্ণয়ের জন্য সেখানে তিনটি ভিউ পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটকরা সেখানে গেলেই এ তিনটি স্থান দেখার সুযোগ পায়। বসার কয়েকটি বেঞ্চ নির্মাণ করে দেওয়ায় পর্যটকরা সেখানে বসে চারদিকের দৃশ্য দেখতে পারে।
জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাশন ব্রিগেড (ইসিবি) এর উদ্যোগে থানচি উপজেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে তমা তুঙ্গী নামে পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। থানচি-রিমাক্রী-মদক-লিকরি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করার সময় তমা তুঙ্গী পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলে সেনাবাহিনীর ইসিবি ব্রিগেড। কয়েকমাস আগে তমা তুঙ্গী পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হলেও ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
তমা তুঙ্গীতে ঘুরতে আসা পর্যটক আবির বলেন, তমা তুঙ্গী নাম শুনেছি কোন দিনও আসি নাই। আজ আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে এসেছি। খুবই সুন্দর একটা পাহাড় থেকে তিনটি পাহাড় দেখা যায়। থানচি হতে তমা তুঙ্গীতে আসতে খুব আরামদায়ক। সড়ক ও অনেক বড় বাইক চালিয়ে আসতে উপভোগ করেছি। তবে সতর্কতা অবলম্বনে ক্ষেত্রে হেলমেট পরিধান করতে হবে।
আরেক পর্যটক শেফালী বলেন, তিন হতে চারদিন সময় নিয়ে ঘুরতে এসেছি। নৌ পথ দিয়ে রেমাক্রিতে ঘুরতে অনেক মজা পেয়েছি। তাই শেষদিনে তমা তুঙ্গীতে এসেছি। যে ভিউ পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে আসলে সেটি চমৎকার। সন্ধ্যায় প্রাকৃতিক বাতাসগুলো উপভোগ করতে মজা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা টুংপ্রেং ম্রো বলেন, এইখানে অনেক পর্যটকরা আসে। আমরা স্থানীয়রা ঘুরতে আসি। ভালোই লাগে এইখানে। সন্ধ্যা হলে এইখানে যে বাতাস সেটি অন্য ধরনের। আর সূর্য ডুবে যাওয়া এই দৃশ্য দেখতে খুব চমৎকার।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আতাউল গণি ওসমানী বলেন, বান্দরবানের যে কয়েকটি উপজেলা রয়েছে তার মধ্যে থানচি অপূর্ব কেননা এখানে সব কিছুই রয়েছে। পর্যটকদের বেড়ানো আর উপভোগের জন্য এই উপজেলার পথে প্রান্তরে রয়েছে মেঘ, পাহাড়, নদী আর ঝর্ণাসহ অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র যে কেউ দেখলে তাদের আতিথেয়তা যে কারোই মন জুড়াবে।
বান্দরবান থানচি ষ্টেশন হতে বাস যোগে কিংবা চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে চলে যাবেন ওয়াই জংশন। সেইখান থেকে ওয়াই আকৃতি চিহ্ন রয়েছে। বামপাশে রুমা উপজেলা ও ডানপাশে থানচি। ডান পাশে রাস্তা ধরে চলে যাবেন সরাসরি থানচি। যাওয়ার পথে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ পেড়িয়ে উঁচু নিচু পাহাড় এমনকি সড়কে পাশে পাহাড় ছোট ছোট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির গ্রাম। অতঃপর থানচিতে পৌঁছে গেলে থানচি উপজেলা পরিষদ সড়কে সোজা উঠে গেলে তমা তুঙ্গী।
//এমটিকে