করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির প্রধান উপায় ভ্যাকসিন বা টিকা। মানবদেহে চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে ইতোমধ্যে এই টিকা বাজারে ছেড়েছে রাশিয়া। চীনেও একটি টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে ‘সাধারণ’ মানুষের ওপর। অন্যদিকে একজন অংশগ্রহণকারী অসুস্থ হয়ে পড়ায় অক্সফোর্ডের টিকার পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ১৯০টির বেশি করোনা টিকার প্রকল্প চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১৪২টি টিকা এখনও প্রি-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে আছে। অর্থাৎ মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়নি। ক্লিনিক্যাল (মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ) পর্যায়ে আছে ৫৬টি। এর মধ্যে প্রথম ধাপে আছে ২৯টি। ১৮টি দ্বিতীয় ধাপে আর তৃতীয় (চূড়ান্ত) ধাপে আছে ৭টি।
সংস্থাটি বলছে, কার্যকারিতা এবং সুরক্ষার নিয়মনীতি মেনে কোনো টিকাই এ বছরের মধ্যে আসতে পারবে বলে তারা মনে করে না। কারণ, এসব টিকার নিরাপত্তার দিকগুলো যাচাই করতে সময় লাগে। তা সত্ত্বেও চীন এবং রাশিয়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে। সেসব টিকাও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় পরীক্ষামূলক হিসেবে রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ, খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) আভাস দিয়েছে- তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই হয়তো করোনাভাইরাসের টিকার অনুমোদন দেয়া হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টের সদস্য অধ্যাপক ফেরদৌসী কাদরী এক নিবন্ধে লিখেছেন, কোভিড-১৯-এর টিকার জন্য বাংলাদেশ অনেক আগ্রহ নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। এক বা একাধিক টিকা যেন আমরা পরীক্ষা করতে পারি এবং আমরা যেন টিকা পেতে পারি, সেই চেষ্টা হচ্ছে। আমি আশাবাদী, যেসব দেশ কোভিড-১৯-এর টিকা প্রথমদিকে পাবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে।
জানা গেছে, একটি টিকা চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে রাশিয়ায়। সেটির নাম ‘স্পুটনিক ভি’। ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে রাশিয়ার ‘গ্যামেলেই ইন্সটিটিউট অব এপিডেমিয়োলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত সোমবার রাতে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের টিকার প্রথম ব্যাচ জনসাধারণের মধ্যে বিতরণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ব্যাচের উৎপাদনও।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, কয়েক মাসের মধ্যেই মস্কোর বেশিরভাগ বাসিন্দা করোনার টিকা পাবে। রাশিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের টিকা নিলে অন্তত দু’বছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে ‘স্পুটনিক ভি’ উৎপাদন করতে পারে রাশিয়া। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সৌদি বাদশাহ সালমানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।