সেলিম রেজা :
চাকরি নয়, ভিন্ন কিছু করতে হবে। এমন চিন্তা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু, স্বপ্নের শুরু ২০১৬ সালে। তবে পড়াশোনার চাপে ২০২০ সালে এফ-কমার্স নিয়ে কাজ শুরু করেন। ব্যবসা শুরুর আগে অনেক ভেবেছেন অনেক জাইগায় চাকরি করেছেন, সময় পেলেই ইন্টারনেট ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করতেন।
এরমধ্যে চলে আসে সংসারের দ্বায়িত্ব পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করাটা অনেক কষ্টের হয়ে দাড়ায় মানিকের। তার পরেও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সংসার চালানোর জন্য চাকরি করেন। কষ্ট আর শ্রম অনুযায়ী বেতন কম থাকা খাওয়ার পরে আর সংসারের হাল ধরা যায় না। ফেসবুক চালাতে চালাতে দেখেন একটা গ্রুপে বিজনেস নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট যা পড়েই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগে তার।
মানিক সরকার বলেন খুবই হতাশায় ভুগছিলাম। নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন গ্রুপের দেখলাম। তখন গ্রুপের কিছুই বুঝতাম না, মাঝে মাঝে দেখতাম, তখন গ্রুপের ৮তম ব্যাচ চলে অনেক পোস্ট চোখের সামনে পড়ে তবে পড়তাম না কারণ কিছুই ভালো লাগতো না, তবে আমার পড়তে অনেক ভালো লাগে, হঠাৎ একদিন কি ভেবে যেনো একটা পোস্ট পড়ি এবং তার পোস্ট পড়ে চোখ থেকে পানি পরে গেলো এবং শেষে দেখলাম ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের অনুপ্রেরণায় সে সফল হয়েছেন। তখন আমার আগ্রহ হলো এখানে কি শেখানো হয় এবং প্রতিদিন অনেকের পোস্ট পরতাম আর অনুপ্রেরণা পেতাম, বিশেষ করে স্যারের পোস্ট পড়ে জীবনের কষ্ট গুলোকে আর কষ্ট মনে হলো না। তারপর আমি পাবনা জেলার এম্বাসেডর জুবায়ের আহম্মেদ বন্ধুর মাধ্যমে ৯ম ব্যাচে রেজিষ্ট্রেশন করি।
যে জীবনটাকে কঠিন মনে করেছিলাম সেই জীবনটাকে স্যারের অনুপ্রেরণায় সহজ করে নিলাম এবং নিয়ম করে স্যারের প্রতিটা পোস্ট ফলো করতাম। সবসময় বিভিন্ন মোটিভেশনাল মুলক কথা গুলো নিজের সাথে মিলিয়ে নিতাম। শেষমেশ সফল উদ্যেক্তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য নানান চিন্তাকে উপেক্ষিত করে একটা ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবসায়ের রিস্ক নিলাম। কারণ একজন উদ্যেক্তার অনত্যম গুণাবলী হচ্ছে নতুন কিছু তৈরী করা। তাইতো নিজেকে নিজের প্রতিষ্ঠানকে সবার সামনে আলাদাভাবে রুপ দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিক করি। আমার নাম আর আমার মায়ের নামের অক্ষরগুলোকে মিল করে নিজের প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করি মাতৃকানন শপ নামে। এরপর এক সমিতি থেকে মাত্র দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১৫ই জুলাই ২০২০ সালে শুরু করি স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান মাতৃকানন শপ। মাত্র ৩ প্রকারের আইটেম নিয়ে শুরু হয় মাতৃকানন শপ এর যাত্রা। আর তা হলো সকল প্রকার গজ কাপড়, নিজস্ব উৎপাদিত ওয়ান পিস এবং ওড়না।
মাতৃকানন শপ এর আলোচিত ব্যতিক্রমধর্মী স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যটা হচ্ছে এখানে সকল প্রকার গজ কাপড় মাত্র ৪০ টাকা গজে বিক্রি করা হয় অনলাইন-অফলাইনে।অনলাইনে পেজের নাম হচ্ছে মাতৃকানন শপ। এছাড়াও ওরনা, ওয়ানপিস সর্বনিম্ন পাইকারী এবং খুচরায় বিক্রি করা হয়। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করে এই মাতৃকানন শপে। ক্রমে ক্রমে বেড়ে ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে আমার প্রতিষ্ঠান মাতৃকানন শপ। শুধু তাই নয়, নিজস্ব ভাবে ওয়ানপিস আর ওড়না তৈরী করে এ যাবৎ মোট ৫ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেই ১০ হাজার টাকার মূলধনের মাতৃকানন শপের বর্তমান মূল্য আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকা, মাসিকক সেল অনলাইন অফলাইন দিয় প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা।
এখন আমি সর্বোপরি খুব খুশি। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান থেকে অর্থসহায়তা পেলে আমার এ প্রতিষ্ঠান আরো অধিক বেগবান হবে বলে আমি মনে করি, আমার এখন ভবিষ্যৎ লক্ষ্য মাতৃকানন শপ একটি স্বতন্ত্র ব্রান্ড হিসেবে সবার মাঝে তুলে ধরা।
আসলে একসময় আমি হতাশ হয়ে পরেছিলাম আর ভেবেছিলাম জীবনে হয়তো কিছুই করতে পারবো না, নিজের স্বপ্ন, মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো না।কিন্তু, ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই ইনশাআল্লাহ এবং সেই সাফল্য আমি পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। নিজেকে পজিটিভ রেখে সামনের দিকে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই ইনশাআল্লাহ।
এমটিকে//বাংলারচোখ