“হাইপোগ্লাইসেমিয়া”-ডায়াবেটিস রোগীদের জ্ঞাতার্থে! ডা. আল ওয়াজেদুর রহমান
বাংলার চোখ সংবাদ
সময়ঃ
মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
স্বাস্থ্য সংবাদ :
হাইপোগ্লাইসেমিয়া মানে রক্তে চিনি বা গ্লুকোজ এর পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া, রক্তের গ্লুকোজ ৩.৯ মিলিমোলের নিচে নেমে যায় তখন তাকে আমরা হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলবো, যা অনেক ডায়াবেটিস রোগী হাইপো নামে ডেকে থাকে. গবেষণায় জানা গেছে পৃথিবীতে সকল ডায়াবেটিস রোগীরা জীবনে কোনো না কোনো এক সময় এই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। যখনই হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় তখন কিছু উপসর্গ দেখে রোগী বুঝতে পারবেন যে তার শরীরের রক্তের চিনির মাত্রা কমে যাচ্ছে সেগুলো হচ্ছে- হাত-পা বা শরীরে কাপুনি অনুভব হওয়া, বুক ধড়ফড় করা ,অস্থিরতা লাগে, শরীর অত্যাধিক ঘেমে যাবে, চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করবেন এবং মাথাব্যথা বা ঘাড় ব্যথা শুরু হয়. যদি এই অবস্থায় রোগী চিনি বা গ্লুকোজ গ্রহণ না করেন তাহলে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে পারে, তখন রোগী ভুল বা অসংলগ্ন কথা বলা শুরু করবেন, এমনকি অচেতন হয়ে যেতে পারেন. আসুন এখন জেনে নেই ডায়াবেটিস রোগীদের কেন এই ধরনের সমস্যা হতে পারে- সময় মত বা সঠিক পরিমাণ মতো খাবার না খাওয়া, হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা, অতিরিক্ত ওষুধ বা ইনসুলিন ভুলবশত বেশি নিয়ে নিলে অথবা যে সকল বয়স্ক রোগীরা অন্যান্য একাধিক রোগে আক্রান্ত যেমন- কিডনি রোগ, হৃদরোগ বা লিভারের জটিলতা এই ধরনের ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়ই হাইপোগ্লাইসেমিয়া আক্রান্ত হন. যাদের অনেকদিন যাবত ডায়াবেটিস, প্রায় ১২ থেকে ১৫ বছর ফলে তাদের স্নায়ু কার্যকারিতা বা বোধশক্তি কমে যায় ফলে তারা হাইপোগ্লাইসেমিয়া আক্রান্ত হলেও সহজে টের পান না এই ধরনের রোগীরা সিভিয়ার হাইপোগ্লাইসেমিয়া পর্যায়ে পৌঁছে অচেতন হয়ে পড়তে পারেন।
এখন জেনে নেই হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে কি করবেন-যখনই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গগুলো আপনার মধ্যে দেখা দিবে তখনই বাসায় বা ফার্মেসিতে গ্লুকোমিটার এর মাধ্যমে ডায়াবেটিস চেক করে নিশ্চিত হয়ে নিন, যদি দ্রুত পরীক্ষা করা সম্ভব না হয় তবুও বসে থাকবেন না, দুই থেকে তিন চামচ চিনি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন অথবা যদি হাতের কাছে গ্লুকোজ থাকে তবে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম গ্লুকোজ খেয়ে নিন অথবা আপনি চকলেট, জুস বা মিষ্টি খেতে পারেন. সম্ভব হলে ১৫-২০ মিনিট পর আবার গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ৬-৭ মিলিমোল পর্যন্ত না আসা পর্যন্ত আবার মিষ্টি জাতীয় খাবার সাথে থাকুন. অবশ্যই সিভিয়ার হাইপোগ্লাইসেমিয়া আক্রান্ত অচেতন রোগীকে জোর করে মুখে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন, উক্ত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অবশ্যই শিরায় গ্লুকোজ দিতে হবে. সেরে ওঠার পর আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন কেন এমনটা ঘটল, আপনার ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস অথবা ব্যায়ামের বিষয়ে আপনার চিকিৎসকের সাথে বিশদ আলোচনা করুন ,তিনি অবশ্যই আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিবেন যেন পরবর্তীতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে. ডায়াবেটিসের রোগী এবং তার পরিবারের সদস্যদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া সম্বন্ধে জানতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে.